আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (প্রথম অধ্যায়) – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12th Political science Question and Answer

 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (প্রথম অধ্যায়) – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12th Political science Question and Answer

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান – আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS Political science Question and Answer :

  1. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সংজ্ঞা লেখো । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশধারা সংক্ষেপে আলোচনা করো । 

Ans: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সংজ্ঞা : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্বের নানা দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক , অ – রাষ্ট্রীয় সংস্থা , প্রতিষ্ঠান , ক্ষমতা , রাজনৈতিক মতান যুদ্ধ – শান্তি , নিরস্ত্রীকরণ , আন্তর্জাতিক সংগঠন , স্বার্থগোষ্ঠী , প্রচার , কূটনীতি , জনমত , বিশ্ববাণিজ্য , বিশ্ব পরিবেশ ও সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে । প্রসঙ্গত , আজকের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো দেশ টিকে থাকতে পারে না । নিজ অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আন্তর্জাতিক সমাজে দেশগুলি পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলে । রাষ্ট্রগুলির এই পারস্পরিক সম্পর্ককে সাধারণ অর্থে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলে । 

  জাতি – রাষ্ট্রের যুগ থেকে বিশ্বায়নের যুগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ নিরস্তর গতিতে চলছে । নীচে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশধারা আলোচিত হলো : 

জাতি – রাষ্ট্রের উদ্ভব : প্রাচীন নগর – রাষ্ট্রের ক্রমবিবর্তনের ধারায় মধ্য যুে জাতি – রাষ্ট্র বা আধুনিক কালের রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠেছে । ১৬৪৮ সালে সার্বভৌম জাতি – রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটে । আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা হলো ইউরোপের নবজাগরণ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফসল । সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখে জাতি – রাষ্ট্রগুলি পরস্পরের মধ্যে অর্থনৈতিক , বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ে তোলে । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশধারা এভাবেই এগিয়ে চলে । 

শিল্পবিপ্লব : ইংল্যান্ড ও ইউরোপের শিল্পবিপ্লব আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে বিশেষ সহায়ক হয়েছে । এসময় শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির বাজারের খোঁজে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ে । এভাবে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দূরত্ব কমে যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে । | 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও পরবর্তী পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তাত্ত্বিক আলোচনার সূত্রপাত ঘটায় । বিশ্ব জুড়ে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে নতুনত্ব আসে । ১৯২০ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুরু হয় প্রকাশ্য কূটনীতির যুগ । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চর্চা এসময় থেকেই ব্যাপক মাত্রায় শুরু হয় । প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ক্রমে বিশ্বের নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পঠন – পাঠন ও এসম্পর্কে বক্তৃতা শুরু হয় । 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতির ব্যাপক পটপরিবর্তন ঘটে । ১৯৪৫ সালে বিশ্বের ৫১ টি দেশ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গড়ে তোলে । তখন থেকে বিশ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক জোটে বিভক্ত হয়ে পড়ে । শুরু হয় দুই মহাশক্তির মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ । এরপর মূলত ভারত , মিশর , ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের উদ্যোগে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয় । সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতি – প্রকৃতি এসময় থেকে পুরোপুরি বদলাতে শুরু করে ।

নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা : ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নয়া বিশ্বব্যবস্থা গড়ে ওঠে । স্বাভাবিকভাবে সারা পৃথিবীতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র একক মহাশক্তি হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করে । একমেরু বিশ্ব এসময় থেকে প্রতিষ্ঠা পায় । এসময় থেকে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার , সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ , বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা , বিশ্বব্যাঙ্ক , ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইত্যাদি অ – রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা কর্মকর্তারাও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ ধারায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং আলোচনায় স্থান পায় । 

বিশ্বায়ন : বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়বস্তুর অনেক পরিবর্তন ঘটেছে । জাতি – রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমিকতা এখন সংকটের মুখে । বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নীতিনির্দেশ মেনে এখন রাষ্ট্রগুলিকে আর্থিক নিয়মকানুন নির্ধারণ করতে হয় । রাষ্ট্র এখন আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নেই । এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় স্থান পেয়েছে পরিবেশগত সমস্যা , বিশ্ব উন্নায়ন , পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসারণ , সন্ত্রাসবাদ , রাজনৈতিক অর্থতত্ত্ব , দারিদ্র্য , মানবাধিকার ইত্যাদি । 

  পরিশেষে , আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নদীর স্রোতের ন্যায় বয়ে চলেছে । যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কও পরিবর্তিত হবে । এর আলোচনায় অনেক নতুন নতুন বিষয় ও স্থান পাবে । 

  1. বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দাও । বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপ নিয়ে আলোচনা করো । অথবা , বিশ্বায়ন কাকে বলে । বিশ্বায়নের প্রকৃতি আলোচনা করো । 

Ans: বিশ্বায়নের সংজ্ঞা : বিশ্বায়ন একটি ব্যাপক ধারণা । এককথায় এর সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয় । তবু সংক্ষেপে বলা যায় বিশ্বায়ন বিশ্বব্যাপী এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে রাষ্ট্র – সংক্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে অবাধ আদান – প্রদান সম্ভব । 

বিশ্বায়নের প্রকৃতি : বিশ্বায়ন নতুন কোনো মতাদর্শ নয় । শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে পুঁজির স্থানান্তর চলছে । লগ্নি পুঁজির বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে অবাধ বাণিজ্যের গুরুত্ব বেড়েছে । এই প্রেক্ষিতে বিশ্বায়নের প্রকৃতি নিম্নরূপ— 

(1) আর্থিক ক্ষেত্র : অমিয়কুমার বাগচির মতে , আর্থিক বিশ্বায়নের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হলো : 

1) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার , 2) নানা স্থানে ব্যক্তিবর্গের অভিগমন ও নির্গমন , 3) বিভিন্ন দেশে অর্থ ও অন্য বিনিময় মাধ্যমের সঞ্চালন , 4) বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ ও উৎপন্ন দ্রব্য বিশ্বব্যাপী বিক্রয়ের প্রবাহ , 5) বিশ্বব্যাপী পুঁজির আদান – প্রদান , 6) বহুজাতিক সংস্থাকে বাণিজ্য , বিনিয়োগে অবাধ স্বাধীনতা এবং 7) বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির লেনদেন ও তথ্য মাধ্যমের প্রসার । 

(2) রাজনৈতিক ক্ষেত্র : বিশ্বায়ন জাতি – রাষ্ট্রের বিরোধী । জাতি – রাষ্ট্র স্থানীয়দের সুখ – স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি দায়বদ্ধ । ফলে জাতি – রাষ্ট্র পুঁজির অবাধ মুনাফা ও নির্বিচার লুণ্ঠনের বিরোধী । তাই বিশ্বায়নের প্রবক্তারা জাতি – রাষ্ট্রের বিলোপ করে বিশ্ব – রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাও চান না । তারা চান জাতি – রাষ্ট্র এমন হোক যাতে পুজিপতিদের সম্পত্তি ও একচেটিয়া বাণিজ্যিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে সীমাহীন হিংসার আশ্রয়ও গ্রহণ করুক । তবে প্রতিষ্ঠানের বিশ্বায়নের প্রবক্তারা শক্তিশালী জাতি – রাষ্ট্রের পরিবর্তে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা , পক্ষে । কারণ এরা তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং বৃহৎ পুঁজির নির্দেশে পরিচালিত হয় । 

(3) সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র : সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নও বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ । সারা বিশ্বে সমসংস্কৃতির প্রসার চান বিশ্বায়নের প্রবক্তারা । ফলে ইন্টারনেট ও অন্যান্য গণ ও সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে বিশ্বায়নের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে । এভাবে জাতি – রাষ্ট্রের সংস্কৃতির রূপ বদলে যায় । সংস্কৃতির বিশ্বায়নে কোনো জাতি – রাষ্ট্রের সংস্কৃতির ভালো বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি কুরুচিকর ও মন্দ দিকগুলিও বিশ্বব্যাপী প্রসার লাভ করে । 

  1. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলতে কী বোঝো ? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য কী ? 

Ans: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সংজ্ঞা : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্বের নানা দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক , অ – রাষ্ট্রীয় সংস্থা , প্রতিষ্ঠান , ক্ষমতা , রাজনৈতিক মতাদর্শ , যুদ্ধ – শান্তি , নিরস্ত্রীকরণ , আন্তর্জাতিক সংগঠন , স্বার্থগোষ্ঠী , প্রচার , কূটনীতি , জনমত , বিশ্ববাণিজ্য , বিশ্ব পরিবেশ ও সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে । প্রসঙ্গত , আজকের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো দেশ টিকে থাকতে পারে না । নিজ অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আন্তর্জাতিক সমাজে দেশগুলি পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলে । রাষ্ট্রগুলির এই পারস্পরিক সম্পর্ককে সাধারণ অর্থে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলে । 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির পার্থক্য : 

Ans: পরিধিগত পার্থক্য : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনার পরিধি অনেক ব্যাপক । এর তুলনায় আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনাক্ষেত্র ছোটো । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় রাজনীতির পাশাপাশি কূটনৈতিক বিষয় , অর্থনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক , পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ও গুরুত্ব পায় । আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি শুধু রাজনৈতিক বিষয় নিয়েই আলোচনায় আগ্রহী । তাই পামার ও পারকিস বলেছেন , আন্তর্জাতিক রাজনীতির তুলনায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনেক বেশি ব্যাপক । 

বিষয়বস্তুগত পার্থক্য : আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার লড়াই প্রাধান্য পায় । তাই বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা , সংঘর্ষ ও বিরোধ বাড়তে থাকে । এসব নিয়েই আন্তর্জাতিক রাজনীতি আলোচনা করে । অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সহযোগিতা , প্রতিযোগিতা , সংঘর্ষ , প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইত্যাদির পাশাপাশি বিশ্বের দেশগুলির পারস্পরিক সহযোগিতা , মিত্রতা ও সমন্বয়সাধনের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করে । তাই বিশ্বের দেশগুলির কোন কোন ক্ষেত্র আলোচনায় স্থান পাবে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে । 

  প্রসঙ্গত , আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আন্তর্জাতিক রাজনীতি । কারণ বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এর উপরই নির্ভর করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , বিশ্বের প্রগতি , সম্প্রীতির আবহ .

4.  শক্তি কাকে বলে ? শক্তির উপাদানগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো ।2 + 6
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি একটি অন্যতম বিতর্কিত ও গুরুত্বপূর্ণ ধারণা । নিরাপত্তা , শাস্তি , ন্যায়নীতি , সম্মান , গৌরব এবং অন্যান্য যেসকল মূল্যবোধ রাষ্ট্র সংরক্ষিত ও প্রসারিত করে তা সার্থক করে তোলার জন্য শক্তির প্রয়োজন ৷ মরগেনথাউ তাঁর ‘ Politics Among Nations ' গ্রন্থে বলেছেন শক্তি হল অন্যের মন ও কাজের ওপর প্রয়োগযোগ্য ক্ষমতা । অরগানস্কি - র মতে শক্তি কোনো বস্তু নয় , সম্পর্কবিশেষ । এ হল কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী অপরকে প্রভাবিত করার দক্ষতা । অধ্যাপক ফ্রাঙ্কেল বলেছেন ক্ষমতা হল প্রত্যাশিত ফললাভের সামর্থ্য ।
i.  শক্তির উপাদান : মরগেনথাউ , ই এইচ কার , অরগানস্কি , জোসেফ ফ্রাঙ্কেল প্রমুখ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ক্ষমতার উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উল্লেখ করেছেন—
ক. Geography বা ভূগোল জাতীয় শক্তির উপাদান হিসেবে ভূগোলের গুরুত্ব অপরিসীম । একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান সেই দেশের ক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে প্রভাবিত করে । এই উপাদানের মধ্যে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে , সেগুলি হল— আয়তন , জলবায়ু , ভূপ্রকৃতি ও অবস্থান ।
খ.   Population বা জনসমষ্টি : কোনো দেশের জাতীয় শক্তির উপাদান হিসেবে মানবসম্পদের অপরিসীম গুরুত্ব আছে । জনসংখ্যার পরিমাণগত ও গুণগত দিক বিচার করা প্রয়োজন । জনসংখ্যা বেশি হলেই দেশ শক্তিশালী হয় না , তাহলে ভারত শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হত । জনসমষ্টির গড় বয়স , নারী - পুরুষ , জন্মহার মৃত্যুহার , স্বাস্থ্য , শিক্ষাগতমান , কর্মদক্ষতা , প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শিতা প্রভৃতি একটি জাতির জনসম্পদের প্রকৃতি ও দক্ষতার বিচারে সাহায্য করে ।
গ.  Raw Materials বা প্রাকৃতিক সম্পদ : প্রাকৃতিক সম্প যে - জাতির প্রাধান্য সেই জাতিই শক্তিশালী । কাঁচামালসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদকে প্রকৃতির আশীর্বাদ হিসেবে ধরা হয় । এর মধ্যে কাঁচামাল , খনিজ সম্পদ , খাদ্যশস্য , ও অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্য , জ্বালানি ধাতু ও খাদ্যসহ কৃষিপণ্য আছে ।
ঘ.  Government বা সরকার : জাতীয় শক্তির রূপ সরকারের উৎকর্ষ বা যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে । সরকারই জাতির ভাবাদর্শ , নৈতিকতা ও নেতৃত্ব গড়ে তোলে । তাই জাতীয় শক্তিকে কাম্য পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য।
ঙ . Good Government- বা সরকার: জাতীয় শক্তির রূপ সরকারের উৎকর্ষ বা যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে । সরকারই জাতির ভাবাদর্শ, নৈতিকতা ও নেতৃত্ব গড়ে তোলা । তাই জাতীয় শক্তির কাম্য পর্যায়ে উন্নতি করার জন্য Good Government- এর ভূমিকা বিরোধ - বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা প্রয়োজন।
চ . Diplomacy বা কূটনীতি : শক্তির মস্তিষ্ক বলা হয় কূটনীতিকে । মরগেনথাউ - এর মতে “ আধুনিক যুগে কূটনীতি হল জাতীয় ক্ষমতার উপাদানসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ । ” কূটনীতির উৎকর্ষের ওপরে জাতীয় শক্তির অগ্রগতি অনেকখানি নির্ভরশীল ।
ছ . Ideology , Morality , Nation Character and Leadership বা ভাবাদর্শ , নীতিবোধ , জাতীয় চরিত্র ও নেতৃত্ব বিশ্বাস , চিন্তাধারা ও জীবনদর্শনকে মিলিতভাবে সূত্রায়িত করাকে ভাবাদর্শ বলে । এই ভাবাদর্শ ও নৈতিকতা আদর্শগতভাবে জাতীয় চরিত্রকে গড়ে তোলে । আবার কোনো জাতির মানসিক ও নৈতিক গুণাবলি নেতৃত্বের প্রকৃতি নির্ধারণ করে ।
জ . Military Strength বা সামরিক শক্তি : কোনো রাষ্ট্রের সামরিক ক্ষমতা জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি করে । সামরিক বাহিনী যদি শক্তিশালী হয় তাহলে সে সহজেই বিদেশি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে এবং সামরিক শক্তি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্রে বলীয়ান হওয়ার জন্য বর্তমানে বৃহৎশক্তিতে পরিণত হয়েছে ।
ঝ . Economic Development বা অর্থনৈতিক উন্নতি কোনো রাষ্ট্র যদি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নত হয় তাহলে তার জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি পাবে । 1
ঞ Patriotism বা দেশপ্রেম রাষ্ট্রের প্রতি ভালোবাসা বা জাতীয়তাবোধ জাতীয় শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক । দেশবাসীর দেশপ্রেম যত গভীর হবে , রাষ্ট্র তত শক্তিশালী হবে ।
মুল্যায়ন
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে , শক্তির উপাদানগুলি প্রত্যেকটি পরস্পরের সঙ্গে জড়িত । তাই কোনো একটি উপাদানের ওপর জাতীয় শক্তি সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল নয় । জাতীয় শক্তিবৃদ্ধিতে অনেকগুলি উপাদান একসঙ্গে কাজ করে ।

Comments

Popular posts from this blog

Electric Charges and Fields Class 12 NEET

RAY OPTICS NEET JEE PRACTISE QUESTIONS

CHALLENGING ELECTROSTATICS QUESTIONS NEET JEE